Ticker

6/recent/ticker-posts

বাংলা অণুগল্প

সাহিত্যের পরিবর্তনের ধারা আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। মানুষ যখন তার মনের একান্ত কথা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করে তখন তা হয় চিঠি। যা সাহিত্যের রূপ নিয়ে প্রকাশ পায় পত্র উপন্যাসে। আর উপন্যাস যখন সমহিমায় সমুজ্জ্বল তখনি এর পরিসর ছোট হয়ে পরিণত হয় ছোটোগল্পে। আর ছোটোগল্পের নবগঠিত রূপ অণুগল্প। অণু অর্থ ক্ষুদ্র। যে গল্পের রচনা পরিসর ও বর্ণনা শৈলী ছোট আকারে প্রকাশ পায় তাই অণুগল্প। বাংলা সাহিত্যে অণুগল্পের লেখক  বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ( বনফুল )। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ( ১৮৯৯-১৯৬১)  বিশ্বের প্রথম অণুগল্প লেখেন। মাত্র ছয় শব্দে লেখাটি: For Sale. Baby Shoes. Never Worn. গল্পটির বাংলা অনুবাদ: বিক্রিয় জন্য। শিশুর জুতা। ব্যবহৃত নয়।

অণুগল্পের বৈশিষ্ট্য:

অণুগল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নরূপ
১. অল্প কথায় অল্প পরিসরে অনন্য ুউন্মোচন।
২. বর্ণনাতীত নই।
৩. কিছু না বলা কথা উহ্য রাখতে হয়।
৪. উপমার প্রয়গ থাকে।
৫.অণুগল্পে চমক থাকতে হয়।
৬. পাঠ করার পর নিজের মতো করে অর্থ খুঁজতে হয়।

            নিমগাছ ও আত্নকাহিনী                            লেখক: বনফুল

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে। পাতাগুলো ছিড়ে শিলে পিষছে কেউ। কেউবা ভাজছে গরম তেলে। খোস দাদ হাজা চুলকানিতে লাগাবে, চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ। কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে। এমনি কাঁচাই কিংবা বেগুন-সহযোগে। যকৃতের পক্ষে ভারী উপকারী। কচি ডালগুলো ভেঙ্গে চিবায় কতলোক... দাঁত ভালো থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন। বলেন-' নিমের হাওয়া ভালো, থাক, কেটো না '। কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না। ময়লা জমে আসে চারদিকে। শান দিয়ে বাঁধিয়ে দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা। হঠাৎ  একজন এক নূতন ধরনের লোক এলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো নিমগাছের দিকে। ছাল তুললো না, পাতা ছিড়লো না, ডাল ভাঙ্গলে না, মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।  বলে উঠলো বাহ, কি সুন্দর পাতাগুলো... এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাহ! খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল। কবিরাজ নয়, কবি। নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগলো লোকটার সঙ্গে চলে যেতে, কিন্তু পারলো না, মাটির ভিতর শিকড় অনেকদূর চলে গেছে। বাড়ির পিছনের আবর্জনাস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলো সে। ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষী বউটির ঠিক এক দশা।



Post a Comment

0 Comments